বরিশাল বা কুয়াকাটা যাওয়ার প্ল্যান করলে প্রথমেই মাথায় একটা নাম ভাসে – সাকুরা পরিবহন।
ঢাকার গাবতলি, সায়েদাবাদ বা টেকনিক্যাল মোড় দিয়া যারা বরিশালের পথে নামছে, তাদের কাছে সাকুরা একেবারে ভরসার নাম।
নোট: উপরের ভাড়া আনুমানিক। উৎসবকালে বা বিশেষ দিনে ভাড়া বাড়তে পারে। সর্বশেষ ভাড়া জানতে অফিসিয়াল সাইট বা কনসোলে ফোন করে নিশ্চিত করুন।
সাকুরা পরিবহন সময়সূচী[/caption]
আগে মনে আছে, টিকিটের জন্য লাইনে দাড়ায়া গরমে ঘাম ঝরাইতে হইত। উৎসবের সময় তো টিকিট পাওয়া মানে লটারির টিকিট!
কিন্তু এখন তো সেই ঝামেলা নাই –
অনলাইনে মোবাইল দিয়েই টিকিট কাটা যায়।
আজকে এই ব্লগে আমি শুধু তথ্য না, নিজের অভিজ্ঞতা, বুকিং প্রক্রিয়া, ভাড়া, সময়সূচী, কাউন্টারের নাম্বার – সবকিছু ধাপে ধাপে শেয়ার করতেছি।
অনলাইনে কিভাবে টিকিট বুকিং করবেন?

ধাপ ১: অফিসিয়াল সাইটে ঢুকুন
- ভিজিট করেন sakuraparibahanbd.com
- Leaving From – কোথায় উঠবেন
- Going To – কোথায় নামবেন
- Date – কবে যাবেন
- Coach Type – AC বা Non–AC
- যতগুলা বাস অপশন আসবে, সেখান থেকে পছন্দমতো বাছেন। তারপর সিট প্ল্যান থেকে নিজের সিট সিলেক্ট করে নিন।
- আপনার নাম, মোবাইল, ইমেইল, ঠিকানা, জাতীয়তা ইত্যাদি লিখেন। শেষে Confirm বাটনে চাপ দেন।
- Bkash, Nagad, Rocket, কার্ড – সব মেথড আছে। যেটা সুবিধা সেটাতে Pay Now করেন।
- ইমেইলে পিডিএফ কপি চলে আসবে
- কাউন্টারে এসএমএস দেখালেও চলবে
- চাইলে প্রিন্ট কইরা নিতে পারেন
সাকুরা পরিবহন অনলাইন টিকিট — ভাড়া তালিকা
নিচের টেবিলে জনপ্রিয় রুটগুলো ও আনুমানিক ভাড়া দেখানো আছে। ভাড়া সময় ও সিজন অনুসারে পরিবর্তিত হতে পারে — বুকিং করার আগে অফিসিয়াল সাইটে চেক করুন।
রোড |
প্রায় ভাড়া (BDT) | নোট |
---|---|---|
ঢাকা → বরিশাল | Non-AC: ৫০০ — AC: ৭০০ (প্রায়) | টিকিট অপারেটর ও কাউন্টার অনুযায়ী ভিন্ন হতে পারে। |
ঢাকা → কুয়াকাটা | Non-AC: ৭৫০ — AC/প্রিমিয়াম: ৯০০–১৬০০ (প্রায়) | কিছু রুটে নন-এসি ৭৫০ টাকায় পাওয়া যায়; প্রিমিয়াম সার্ভিসে দাম বেশি। |
ঢাকা → পটুয়াখালী | ৬৫০ — ১৪০০ (প্রায়) | দূরত্ব ও এসি/নন-এসি অনুযায়ী পরিবর্তিত। |
ঢাকা → ঝালকাঠি | ৬৫০ — ৯০০ (প্রায়, সাধারণত ~৭০০) | লোকাল পোস্ট/কাউন্টার পোস্টগুলোতে প্রায়ই ~৭০০ টাকা দেখা যায়। |
ঢাকা → বরগুনা | ৬৭০ — ৮০০ (প্রায়) | অপশন অনুযায়ী ভাড়া পরিবর্তিত হয়; অনলাইন বুকিং সাইটগুলোতে এই সীমা দেখায়। |
সাকুরা পরিবহন —সময়সূচী
[caption id="attachment_469" align="aligncenter" width="300"]
ঢাকা → বরিশাল রোড
ফেয়ার সম্ভবত পরিবর্তনশীল — নিশ্চিত করতে অফিসে কল করুন।
প্রস্থানের সময় | আগতির সময় (আনুমানিক) | বাস ধরন | |
---|---|---|---|
05:00 AM | 10:30 AM | স্লিপার | |
07:30 AM | 01:00 PM | এসি | |
10:00 AM | 03:30 PM | নন-এসি | |
01:00 PM | 06:30 PM | স্লিপার | |
04:00 PM | 09:30 PM | এসি | |
09:00 PM | 02:30 AM | নাইট সার্ভিস |
ঢাকা → কুয়াকাটা রোড
কুয়াকাটা রুটে সময় পরিবহন ও ফেরি সংযোগের কারণে সময় পরিবর্তিত হতে পারে।
প্রস্থানের সময় | আগতির সময় (আনুমানিক) | বাস ধরন | |
---|---|---|---|
06:00 AM | 01:00 PM | এসি | |
09:00 AM | 04:30 PM | স্লিপার | |
12:30 PM | 08:00 PM | নন-এসি | |
03:30 PM | 10:00 PM | এসি | |
08:00 PM | 03:00 AM | নাইট সার্ভিস |
কাউন্টার নাম্বার (গুরুত্বপূর্ণ)
ঢাকা ও বরিশাল বিভাগের কাউন্টার নাম্বারগুলো নিচে দেওয়া হলো। বাকি নাম্বার অফিসিয়াল সাইট বা গুগল ম্যাপ থেকে পাওয়া যাবে।অবস্থান | কাউন্টার / অফিস | ফোন নম্বর |
---|---|---|
ঢাকা | গাবতলি | |
ঢাকা | সায়েদাবাদ | |
ঢাকা | সাভার | |
ঢাকা | নবীনগর | |
বরিশাল বিভাগ | বরিশাল | |
বরিশাল বিভাগ | পটুয়াখালী | |
বরিশাল বিভাগ | কুয়াকাটা | |
বরিশাল বিভাগ | ঝালকাঠি |
বাকি নাম্বার ও আরও বিস্তারিত তথ্য অফিসিয়াল সাইট বা গুগল ম্যাপসে পাওয়া যাবে।
আমার নিজের অভিজ্ঞতা – সাকুরা পরিবহন
সত্যি কথা কইলে, আমি জীবনে অনেক কোম্পানির বাসে চইরা ঘুরিছি—শীতল, গ্রীন লাইন, হানিফ, সোহাগ, অনেক নাম আছে। কিন্তু ঢাকাত্তুর বরিশাল/কুয়াকাটা রুটে সাকুরা পরিবহন অনলাইন টিকিট এর সুবিধা আলাদা। প্রথমবার সাকুরা বাসে চড়ার ঘটনা ছিল ঈদের কয়েকদিন আগে।টিকিট কাটার হাহাকার, কাউন্টারে লাইন, রোদ-বৃষ্টি—সব মিলে হুলস্থুল অবস্থা। তখন অনলাইনে টিকিট বুকিং সিস্টেমের কথা জানলাম। sakuraparibahanbd.com এ ঢুকলাম, দুই মিনিটে সিট বুক হয়ে গেল। ভাবলাম, আরে বাহ! লাইনে দাঁড়াইয়া আর ঘাম ঝরানোর দরকার নাই, সবকিছু মোবাইল দিয়া করা যায়।
সিট আর ভেতরের পরিবেশ
বাসের ভেতরে ঢুকলেই প্রথমে যা চোখে পড়ে তা হইল পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা। সিটগুলাই মজবুত, সামনে ফাঁকা জায়গা ভালো, মানে লম্বা মানুষও আরামসে বসতে পারে। আমি আবার একটু খুঁতখুঁতে—পা রাখার জায়গা, সিটের কভার, হ্যান্ডরেস্ট—সব দেখি। এই দিক থেকে সাকুরা আমাকে নিরাশ করে নাই। এসি বাসে চড়ছিলাম—না বেশি ঠান্ডা, না বেশি গরম। আরেকটা ভালো জিনিস—বেশিরভাগ বাসেই চার্জার পোর্ট থাকে। তাই মোবাইল-ল্যাপটপে কাজ করতে চাইলে সমস্যা নাই।
যাত্রাপথের অভিজ্ঞতা
ঢাকা থেকে বরিশাল গেছি কয়েকবার। টাইম মেইনটেইন করা দিক থেইকা এই কোম্পানি আমার কাছে সেরা। বাস সাধারণত কাউন্টারের নির্ধারিত টাইমেই ছাড়ে, অযথা দেরি খুব কম হয়। মাঝপথে একবার খাবারের স্টপেজ দেয়—সেখানে সাধারণ খাবার পাওয়া যায়।আমি সাধারণত চা-সিঙ্গারা খাই, বেশি কিছু খাই না।
রাস্তার উপর চালকদের কন্ট্রোলও দারুণ। অকারণে ওভারটেক বা গতি বাড়ানো আমি দেখি নাই। বরং সেফলি চালায়, তাই মনে একরকম শান্তি আসে।
নিরাপত্তা আর নিশ্চয়তা
বাসে সিসিটিভি থাকে, ফলে যাত্রী হিসেবে একটা সেফটি ফিল হয়। পাশাপাশি ড্রাইভার-হেল্পারদের ব্যবহারও মোটামুটি ভদ্রই পাইছি। একবার বরিশাল থেকে ঢাকা ফিরতেছিলাম রাতের বেলা। প্রথমে চিন্তা করতেছিলাম, রাতের যাত্রা কি নিরাপদ হবে নাকি? কিন্তু ভ্রমণের সময় বুঝলাম—রাস্তাঘাটে পুলিশ চেকপোস্ট, সিসিটিভি, আর কোম্পানির গাইডলাইনের কারণে নিরাপত্তা ভালোই।
টিকিট নিয়ে মজার অভিজ্ঞতা
একবার ঈদের আগে টিকিট পাই নাই। পরে অনলাইনে ঢুকে দেখি, AC বাসে কিছু সিট ফাঁকা আছে। বুক করলাম, আরামসে চইরা বসলাম। গরমে যখন মানুষ টিকিট না পাইয়া হাপাচ্ছিল, আমি তখন এসিতে বসে জানালার বাইরে কুয়াকাটার সমুদ্রের দিগন্ত দেখতেছিলাম।মনে হচ্ছিল—জীবন এত কষ্টেরও না!
আমার অভিজ্ঞতা দিয়া বলব, বরিশাল বা কুয়াকাটা যাওয়ার প্ল্যান থাকলে সাকুরা পরিবহন অনলাইন টিকিট একবার ট্রাই করেন।
কিছু সাধারণ প্রশ্ন (FAQ)
প্রশ্ন ১: অনলাইনে টিকিট কাটলে কি বাড়তি চার্জ দিতে হয়?- না ভাই, সাধারনত বাড়তি চার্জ লাগে না। তবে কিছু সময় পেমেন্ট মেথডের উপর নির্ভর করে ব্যাংক বা গেটওয়ে ছোটখাটো চার্জ কইরা নিতে পারে।
- পাইবেন, কিন্তু শর্ত আছে। সাধারণত যাত্রার ৬ ঘন্টা আগে জানাইলে ৯০% টাকা ফেরত মিলে, বাকি ১০% সার্ভিস চার্জ কইরা কাটে।
- এইটা কিন্তু ঝামেলার বিষয়। প্রায় সবসময়েই বাস মিস করলে টাকা ফেরত পাওয়া যায় না। তবে কিছু সময় শিফট কইরা অন্য বাসে দেওয়া হয়, কিন্তু সেইটা সম্পূর্ণ সাকুরার নীতি উপর নির্ভর করে।
- হ, বুকিং এর পর আপনার মোবাইলে SMS/রিসিপ্ট আসে। সেইটা কাউন্টারে দেখাইলেই টিকিট হাতে পায়া যাবেন।
- সাধারণত নাম পরিবর্তন করা যায় না। তবে ভুল হলে আগে ভাগে কাস্টমার কেয়ারে যোগাযোগ দিলে অনেক সময় সহায়তা করে।
- বেশিরভাগ নতুন মডেলের AC বাসে চার্জিং পোর্ট থাকে। ওয়াইফাই সব বাসে নাই, কিন্তু নতুন আসা গুলায় আস্তে আস্তে যোগ হচ্ছে।
- ৫ বছরের বেশি বয়স হলেই বাচ্চাদের আলাদা টিকিট কাটতে হয়। ৫ বছরের কম হলে সাধারণত সিট শেয়ার করতে পারে।
- কমপক্ষে ১৫-২০ মিনিট আগে কাউন্টারে পৌঁছানো ভালো। উৎসবের সময় হলে অন্তত আধাঘন্টা আগে যাইলে আরাম।
- সেই ক্ষেত্রে সরাসরি সাকুরার কাস্টমার কেয়ারে ফোন দেন বা সহজ.কম দিয়া চেষ্টা করেন। দরকার পড়লে নিকটস্থ কাউন্টারে যাইতে হবে।
- হ, অনলাইনে বুক করলে আপনি নিজেই সিট সিলেক্ট করতে পারেন। আগে বুক করলে বেশি সুযোগ থাকে।
- না, SMS/ইমেইল কনফার্মেশন থাকলেই চলে। তবে প্রিন্ট করলে ঝামেলা কম হয়।
শেষ কথাঃ সাকুরা পরিবহন অনলাইন টিকিট শুধু বাস সার্ভিস না, বরং যাত্রীদের কাছে এক ধরনের ভরসা।, বরং যাত্রীদের কাছে এক ধরনের ভরসা। সময়মতো ছাড়ে, যাত্রা আরামদায়ক, অনলাইনে টিকিট কাটা সহজ,
নিরাপত্তা নিয়েও নিশ্চিন্ত থাকা যায়। আমি ব্যক্তিগতভাবে যেকোনো সময় বরিশাল বা কুয়াকাটা রোডে গেলে সাকুরা ছাড়া অন্য কিছু চিন্তাই করি না।
আপনারাও যদি ঘুরতে চান বা কাজের জন্য যেতে চান, তাহলে আজকেই ভিজিট করেন sakuraparibahanbd.com আর টিকিট বুক কইরা ফেলেন।
Tags:
Online Tickets