প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক সাধারণ ঋণ – যোগ্যতা, কাগজপত্র, সুদের হার

বাংলাদেশে শুধু বিদেশ যাইতেছে এমন মানুষই না, সাধারণ মানুষও যাতে ব্যবসা বা নতুন প্রকল্প চালাইতে পারে, সেই জন্য সরকার একটা দারুণ সুবিধা রাখছে। এই সুবিধার নাম – “প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক সাধারণ ঋণ”। মানে, অভিবাসী কর্মী ছাড়া বাকি সাধারণ জনগণও এই ব্যাংক থেকে সহজ শর্তে জামানত সহকারে ঋণ পাইতে পারবে।

 
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক সাধারণ ঋণ

যোগ্যতা ও দরকারি কাগজপত্র (প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক সাধারণ ঋণ)

এই ঋণ পাইতে চাইলে কিছু নিয়ম মানত অইব আর নিচে যেই কাগজপত্রগুলো লাগব, টেবিলে ধাপে ধাপে দেওয়া হইলো —
বিষয় কাগজপত্র / বিস্তারিত
আবেদন আপনের প্রকল্প বা ব্যবসা যেই জাগায় আছে, ওই এলাকার প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের শাখায় গিয়া আবেদন ফরম নিতে অইব। আবেদন ফরম ব্যাংক থেইকা ফ্রি পাওয়া জায়।
ছবি আর আইডি কার্ড আবেদনকারীর ৩ কপি ছবি আর জাতীয় পরিচয়পত্র (জন্ম নিবন্ধন/এনআইডি) এর ফটোকপি লাগব। গ্যারান্টরের ২ কপি ছবি আর জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি লাগব।
ঠিকানার প্রমাণ ইউনিয়ন পরিষদ বা পৌরসভা থেইকা পাওয়া ঠিকানার সনদপত্র জমা দিতে অইব (ভ্যাট/ট্যাক্স/লোকাল সার্টিফিকেট চালায়)।
ট্রেড লাইসেন্স (যদি ব্যবসা থাকে) হালনাগাদ ট্রেড লাইসেন্সের কপি লাগবে — যদি আপনে ব্যবসা চালাইতাসেন।
প্রকল্প বিবরণী ব্যবসা/প্রকল্পের বিস্তারিত প্ল্যান ও হিসাব—আয়-ব্যয়ের হিসাব কমপক্ষে ১ বছরের জন্য লিখা জমা দিতে অইব। যদি লাগি তো খরচ, দাম, অনুমিত আয় ইত্যাদি দেখান।
দোকান বা জায়গার প্রমাণপত্র যদি ভাড়া হয় — ভাড়ার চুক্তিপত্র (লিজ এগ্রিমেন্ট)। যদি নিজের হয় — জমির/দোকানের মালিকানার দলিল জমা দিতে অইব।
আগে কোন ঋণ নিলে তার ঘোষণা অন্য কোন এনজিও বা ব্যাংক থেইকা আগের লোন থাকলে তার ডিক্লারেশন/রিলিজ কাগজ জমা দিতে অইব।
অভিজ্ঞতা বা প্রশিক্ষণ কোনো ব্যবসায়িক কোর্স বা প্রশিক্ষণের সার্টিফিকেট থাকলে তার কপি জমা করন — থাকলে সুবিধা হয়।
নোট: শাখায় গিয়া আবেদন করার আগেই কাগজগুলো স্ক্যান কইরা এক সেট রাখলে সুবিধা হইব। ব্যাংক অতিরিক্ত কাগজ চাইতে পারে — ভুল কইরা বা ফরম পূরণে সমস্যা আইলে শাখা কর্মকর্তার লগে সরাসরি কথা কইরা ঠিক কইরা লইন।

প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক সাধারণ ঋণের সীমা

প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের এই সাধারণ ঋণে তুমিই সর্বোচ্চ ২০ লক্ষ টাকা (২০,০০,০০০) পর্যন্ত নিতে পারবা। তবে নিয়ম হইল, যতো টাকার ঋণই নাও না ক্যান, জামানত দিবার লাগবই। মানে, তোমার নিজের জমি-জায়গা, বাড়িঘর বা অন্য কোনো সম্পত্তি রেজিস্ট্রি কইরা বন্ধক রাখতে অইব। এভাবে ব্যাংক নিশ্চিত হইয়া যায় যে, টাকা ফেরত আসব।

প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক সাধারণ ঋণের মেয়াদ

ঋণ নেওয়ার পর একবারে ফেরত দিতে হইব না। তুমিই সর্বোচ্চ ১০ বছর সময় পাইবা টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য। এই ১০ বছরে নিয়মিত কিস্তি দিয়া দিয়া টাকা শোধ করতে অইব। যেহেতু ব্যাংক দীর্ঘ মেয়াদে ঋণ দিচ্ছে, তাই উদ্যোক্তার জন্য চাপ কম থাকে। যদি ব্যবসা তাড়াতাড়ি ভালো চলে, চাইলে আগেই টাকা ফেরত দিয়া শেষও কইরা ফেলা যাইব।

প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক সাধারণ ঋণ সুদের হার

এখানে ৯% সরল সুদ ধরা হইব। সরল সুদ মানে হইল, প্রতি বছরে তোমার মূল টাকার ওপর নির্দিষ্ট ৯% হিসাব করব। এখানে কোনো বাড়তি চার্জ বা লুকানো খরচ নাই। সার্ভিস চার্জও নাই, যেটা অন্য অনেক ব্যাংকে থাকে। এই কারণে এ ঋণটা ব্যবসায়ীদের জন্য কিছুটা স্বস্তির, কারণ কত দিতে হইব আগে থেকেই বুঝা যায়।

কেন এই ঋণ গুরুত্বপূর্ণ?

গ্রামের মানুষ যাদের হাতে সামান্য পুঁজি আছে, তারা এই ঋণ দিয়ে দোকান, চাষাবাদ, পশুপালন বা ছোট কারখানা চালাইতে পারবে। শহরে যারা নতুন ব্যবসা শুরু করতে চায়, তারাও এ সুযোগ নিতে পারে। এভাবে নতুন উদ্যোক্তা তৈরি হবে, আর্থিক স্বাবলম্বিতা বাড়বে।

দরকারি তথ্য

  • ব্যাংক: প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক
  • ওয়েবসাইট: https://pkb.gov.bd
  • অফিসিয়াল PDF বিজ্ঞপ্তি: PDF File
  • সোর্স: সরকারি অফিসিয়াল ওয়েবসাইট
আরও পড়ুনঃ প্রস্তুতি ছাড়াই মহিলাদের ক্রিকেট বিশ্বকাপে বাংলাদেশ নারী দল

প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক সাধারণ ঋণ সম্পকিত সাধারণ প্রশ্নোত্তর (FAQ)

প্রশ্ন ১: প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক সাধারণ ঋণ কারা নিতে পারবে?
  • অভিবাসী কর্মী বাদে বাংলাদেশের যেকোনো সাধারণ নাগরিক যারা ব্যবসা, প্রকল্প বা উদ্যোগ শুরু করতে চান তারা এই ঋণ নিতে পারবেন।
প্রশ্ন ২: সর্বোচ্চ কত টাকা পর্যন্ত ঋণ পাওয়া যায়?
  • সর্বোচ্চ ২০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঋণ নেওয়া সম্ভব। তবে এর জন্য জামানত দিতে হবে।
প্রশ্ন ৩: ঋণের মেয়াদ কতদিন?
  • সর্বোচ্চ ১০ (দশ) বছর পর্যন্ত কিস্তিতে ঋণ পরিশোধ করা যায়।
প্রশ্ন ৪: এই ঋণের জন্য কত সুদ দিতে হয়?
  • মাত্র ৯% সরল সুদ হারে টাকা দিতে হয়। কোনো সার্ভিস চার্জ নেই।
প্রশ্ন ৫: জামানত ছাড়া কি ঋণ পাওয়া যাবে?
  • না। যেকোনো পরিমাণ ঋণের ক্ষেত্রে জামানত বাধ্যতামূলক এবং সেটি রেজিস্ট্রি বন্ধক করতে হয়।
প্রশ্ন ৬: দরকারি কাগজপত্র কী কী লাগবে?
  • আবেদনকারীর ছবি, জাতীয় পরিচয়পত্র, ঠিকানার সনদ, গ্যারান্টরের ছবি ও আইডি, প্রকল্পের বিবরণী, আয়–ব্যয় হিসাব, ট্রেড লাইসেন্স (যদি থাকে), দোকান/জমির প্রমাণপত্র, প্রশিক্ষণ সার্টিফিকেট (যদি থাকে) ইত্যাদি।
প্রশ্ন ৭: আবেদন কোথায় করতে হবে?
  • নিকটস্থ প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের শাখায় গিয়ে আবেদন করতে হবে। আবেদন ফরম ফ্রি তে পাওয়া যায়।
প্রশ্ন ৮: আবেদন প্রক্রিয়ায় কত সময় লাগে?
  • সব কাগজপত্র সঠিকভাবে জমা দিলে ব্যাংকের যাচাই–বাছাই শেষ হতে সাধারণত কয়েক সপ্তাহ সময় লাগে।
প্রশ্ন ৯: এই ঋণ কি নতুন উদ্যোক্তারা নিতে পারবে?
  • হ্যাঁ, ছোট ব্যবসা শুরু করা কিংবা নতুন উদ্যোক্তা হতে চাইলে এ ঋণ বিশেষ সহায়ক হবে।
প্রশ্ন ১০: অফিসিয়াল তথ্য কোথায় পাওয়া যাবে?
  • অফিসিয়াল তথ্য পাওয়া যাবে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের ওয়েবসাইটে: www.pkb.gov.bd
উপসংহার: 
দেইখেন, প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের এই সাধারণ ঋণ আসলে গরিব–মধ্যবিত্ত মানুষরে জন্য একধরনের বড় সুবিধা। আগে অনেকের ব্যবসার আইডিয়া থাকত, কিন্তু টাকা না থাকার কারণে কাজ শুরু করতে পারত না। 

এখন এই লোন দিলে জামানত দিয়া হইলেও ২০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত তোলা যায়। আবার সুদের হারও কম, সার্ভিস চার্জ নাই – এইটা আসলেই অনেক সুবিধাজনক ব্যাপার। তাই, যাঁরা নতুন ব্যবসা শুরু করবার চান বা পুরান ব্যবসা বাড়াইবার চান, অরা দেরি না কইরা প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের শাখায় গিয়া যোগাযোগ করেন। 

কাগজপত্র ঠিকঠাক থাকলে লোন পাওয়া কঠিন কিছু না। শেষে একটা কথাই কইমু – “টাকা পাইলে কাজ শুরু করেন, কাজ করলে ইনকাম আসব, ইনকাম আসলে জীবন চলা আরও সুন্দর হইব।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন